ভারতীয় ও পাশ্চাত্য রাজনৈতিক চিন্তাধারার নিজ নিজ বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ কর । DistinctiveFeatures of The Indian and Western Political Thought.

ভারতীয় ও পাশ্চাত্য রাজনৈতিক চিন্তাধারার 

 ভারতীয় ও পাশ্চাত্য রাজনৈতিক চিন্তাধারা

অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক ঃ

১। মানবসভ্যতায় কোথায়  প্রথম রাজনৈতিক চিন্তার বিকাশ ঘটে?

উত্তর।  প্রাচীন গ্রীসে. 


২। রাজনৈতিক চিন্তাধারা কী?

উত্তর। সাধারণ বা প্রকৃত ভাবে রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রকৃতি,গঠন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও প্রয়োগ, প্রয়োগের সমস্যা, রাষ্ট্রীয় কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত মনুষ্যসম্প্রদায়ের অধিকার, কর্তব্য, অ-রাষ্ট্রীয় সমিতি, সংঘের সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্ক প্রভৃতি বিষয়ের দিকগুলিকে রাজনৈতিক চিন্তাধারা বলা হয়।


৩। প্রাচীন গ্রীস দেশে পন্ডিতগণদের কী বলা হত? 

 উত্তর। প্রাচীন গ্রীস দেশে, পন্ডিতগণদের সফিস্ট বলা হত।  


৪। কয়েকজন প্রাচীন পাশ্চাত্য রাষ্ট্রচিন্তাবিদের নাম লেখ। 

উত্তর। রাষ্ট্রচিন্তাবিদ বা দার্শনিক প্লেটো, সক্রেটিস,  অ্যারিস্টটল প্রভৃতি।


৫। প্রাচীন ভারতের রাষ্ট্রীয় কাঠামো, ধর্ম,  সমাজ, প্রথা বিষয়ক চর্চা করেছেন এমন কয়েকজন বিদেশী চিন্তাবিদদের নাম লেখ।

উত্তর।  গ্রীণ, ম্যাক্সমুলার, হপকিনস্ প্রমুখ।


৬। প্রাচীন ভারতের রাষ্ট্রীয় তত্ত্ব বিষয়ক আলোচনা করেছেন এমন কয়েকজনের নাম লেখ।

উত্তর। রমেশচন্দ্র দত্ত, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্যামশাস্ত্রী, কে.ভি. আর আয়েঙ্গার,  ভি.এস. আগরওয়াল প্রমুখ।


৭। প্রাচীনভারতের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ঐতিহ্য কী ?

 উত্তর। প্রাচীন ভারতীয় বিভিন্ন সাহিত্য ও ধর্মগ্রন্থগুলিতে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রাষ্ট্ররাজনীতির উপাদানগুলিই হল প্রাচীন ভারতের রাষ্ট্রব্যবস্থার ঐতিহ্য।


৮। প্রাচীন ভারতীয় রাষ্ট্রচিন্তার একটি বৈশিষ্ট্য লেখ।

উত্তর। প্রাচীন ভারতীয় রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল - ধর্ম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা।


৯। 'মানুষই সবকিছুর পরিমাপক’ উক্তিটি কার?

উত্তর। গ্রিক দার্শনিক প্রোটাগোরাসের উক্তি।


১। ভারতীয় রাষ্ট্রচিন্তার বৈশিষ্ট্য গুলি উল্লেখ কর।


উত্তর।  প্রথমতঃ প্রাচীন ভারতে রাষ্ট্রচিন্তার রাষ্ট্রের প্রয়োজন সমাজ শৃঙ্খলার স্বার্থে - এক্ষেত্রে প্রজা রাজাকে আনুগত্য দেখাবে রাজা প্রজাপালন করবে। মানব জীবনের সকল ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা নেই।

দ্বিতীয়তঃ প্রাচীন ভারতে রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল - ধর্ম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। ইউরোপের Divine Origin of State তত্ত্বে বলেছেন যেমন ব্যাখ্যা করা হয় রাষ্ট্রের সৃষ্টি ঈশ্বরের বিধান সমরূপ প্রাচীন ভারতের রাষ্ট্রচিন্তার রাষ্ট্র সৃষ্টি ধারণা পোষণ করা হয়।

তৃতীয়তঃ প্রাচীন ভারতের রাষ্ট্রচিন্তার রাজদণ্ড নীতির তুলনায় ধর্মদণ্ডনীতি অধিক গ্রহণ যোগ্য ছিল। 

চতুর্থতঃ বৈদিক যুগের রাষ্ট্র সমাজ নিয়ন্ত্রণে বিধাতা সভা, সমিতিগণ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

পঞ্চমতঃ প্রাচীন ভারতের রাষ্ট্র ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যের অন্যতম আলোচ্য বিষয় অর্থশাস্ত্র ঐতিহ্য অর্থশাস্ত্র অনুযায়ী শাসন, শৃঙ্খলা, শক্তি ও বিচারের, পথে লক্ষ্য অর্জিত হবে। ন্যায়ের প্রতীক হলেন - দণ্ডধারী রাজা। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র-১৯০৫ সালে পণ্ডিত শ্যামশাস্ত্রী জনসমক্ষে—দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে রাজনীতিকে রাষ্ট্রকে অধিকার ও পরিচালনার বিজ্ঞান হিসাবে ব্যাখা করা হয়েছে।

ষষ্ঠতঃ প্রাচীন ভারতের রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল ইহা জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মের নীতি আদর্শ সাথে সম্পর্ক যুক্ত। বৈদিক চিন্তাধারা সংকীর্ণতার প্রত্যুত্তরে জৈন ও বৌদ্ধ ধর্ম ভারতীয় সমাজে প্রাধান্য বিস্তার করে। জৈন ধর্ম অনুযায়ী ক্রোধ, অভিমান, লোভ জয় করতে হবে, নগরের কল্যাণকারী হবেন রাজা, রাজা হবেন সংযমী, নারী সঙ্গ ও কামনা ত্যাগী ধর্মপ্রাণ সুবংশজাত, সদাচারী সত্যবাদী ও প্রজাপালক।

সপ্তমতঃ প্রাচীন ভারতের রাষ্ট্রচিন্তা চার্বাক দৃষ্টিভঙ্গির ও নৈতিকতা ভিত্তিক আলোচনা করা যায়। কমণ্ডকের নীতিসার আলোচনা রাজনীতিতে নৈতিক গুরুত্ব দিয়েছে। রাজ্যশাসনে, শাসকের দায়বদ্ধতা, মূল্যবোধ, প্রজাপালন প্রভৃতিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। চার্বাক দর্শন প্রাচীন ভারতীয় রাজনীতি চর্চার একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি। চার্বাকরা বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে যেকোন বিষয় অনুধাবন করতে চায়।

অষ্টমতঃ প্রাচীন ভারতের রাষ্ট্র চিন্তায় মূলত রাজতন্ত্রের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা থাকলেও শাসনকার্য পরিচালনার দায়ীত্বশীলতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। নানান প্রতিষ্ঠান যথা সভা, সমিতি, প্রভৃতির মাধ্যমে দায়িত্বশীলতা কার্যকারী করার প্রচেষ্টা হয়েছে।

প্রসঙ্গত প্রাচীন ভারতীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা আলোচনা প্রসঙ্গে খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের ষোড়শ মহাজন পদ, সার্বভৌম রাষ্ট্র মগধ, কুষান সাম্রাজ্য, সাতবাহন প্রভৃতি শাসনব্যবস্থার উল্লেখ করতে হবে।

সর্বোপরি বলা যায় ভারতীয় চিন্তায় রাষ্ট্রের তুলনায় সমাজের গুরুত্ব আগে দেওয়া হয়েছে। পরিবার থেকে সমাজ সকল প্রতিষ্ঠান পরিচালনার নৈতিক কর্তব্য পালনে শৃঙ্খলাবদ্ধ পরিবেশ তৈরি করে রাষ্ট্র। প্রাচীন ভারতীয় রাষ্ট্র চিন্তায় প্রাচীন সাহিত্য ও ধর্মগ্রন্থ সমূহ সে সময়ে রাষ্ট্র ব্যবস্থার ঐতিহ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। সমাজ পরিবর্তন ও প্রয়োজন নিজস্ব বৈশিষ্ট্য সমন্বিত করে প্রাচীন ভারতীয় সমাজ রাষ্ট্র চেতনার প্রসার ঘটায়।

২। পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তার বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ কর।


উত্তর।  পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম ব্যক্তিত্বরা হলেন সক্রেটিস, প্লেটো, অ্যারিস্টটল প্রমুখ। 

প্রথমতঃ এই চিন্তাধারায় রাষ্ট্রীয় পরিচালন ব্যবস্থায় নাগরিক সম্প্রদায়ের অংশগ্রহনের উপর গুরুত্ব আরোপিত হয়েছিল।


 দ্বিতীয়তঃ পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তা আলোচ্য বিষয় যুক্তিবৃত্তির প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। পরস্পর যুক্তিতর্ক বিচারবুদ্ধির প্রয়োগে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার বিভিন্ন দিক আলোচনা কথোপকতা বা সংলাপের মাধ্যমে প্রকাশের প্রয়াস পরিলক্ষিত হয়। 


তৃতীয়তঃ এই রাষ্ট্রচিন্তাধারায় নৈতিকতা, অর্থনীতি, সমাজতত্ত্ব পারস্পরিক সৌহার্দপূর্ণ মিলনের দিক উন্মোচিত করে।


চতুর্থতঃ পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তায় ব্যাক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী চিন্তাধারার প্রভাব অধিকরূপে প্রতিফলিত হয়। তবে রাষ্ট্রীয় সমাজ কেন্দ্রিক চিন্তাধারারও উপস্থিতি ছিল। 


পঞ্চমতঃ পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিত্তাধারায় ধর্মীয় প্রাধান্য খুববেশী ছিল না। এরূপ চিন্তাধারায় ব্যক্তির যোগ্যতা বিচার অধিকমাত্রায় গৃহীত হয়েছিল। 

 

ষষ্ঠতঃ পাশ্চাত্যের রাষ্টরচিন্তায় গ্রীক নগররাষ্ট্রের আলোচনা গুরুত্ব সহকারে বিবেচিত হত।


সপ্তমতঃ ব্যাক্তিস্বাতন্ত্র্য ও নগররাষ্ট্রের প্রাধান্য উভয়ের দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক ভিত্তিক আলোচনা পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।


 অষ্টমতঃ পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচর্চার আইনকে প্রকৃতির নির্ভর করে বিচার বুদ্ধি দিয়ে ব্যাখ্যার প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়। 


নবমতঃ পাশ্চাত্য রাষ্ট্রচর্চায় শাসক ও রাষ্ট্র সমরূপ অবস্থান করে। স্বভাবতই আইন, রাষ্ট্রীয় চরিত্র, সংবিধান সকল কিছুই শাসকের দ্বারা নির্ধারিত—এরূপ ব্যাখ্যা পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচর্চায় পাওয়া যায়।


দশমতঃ  পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচর্চা নীতিশাস্ত্রের সাথে ঘনিষ্ট ভাবে জড়িত ছিল। নৈতিকতার নির্দেশ মান্য করে রাষ্ট্রনীতি পরিচালনায় এরূপ রাষ্ট্রচর্চা গুরুত্ব দেয়। অবশ্য আইনসংক্রান্ত তত্ত্বের সম্পৃক্তকরণ পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচর্চায় পরিলক্ষিত হয়। 


একাদশতমঃ পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচর্চায় আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আলোচনা খুব বেশী দেখা যায় না।

প্রবন্ধমূলক উত্তরভিত্তিক ঃ

১। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য রাষ্ট্রচর্চার পার্থক্যগুলি উল্লেখ কর। 

উত্তর। বুদ্ধিবৃত্তির ক্রমোন্নয়নে বাস্তবতার অভিজ্ঞতায় নিঃসঙ্গ ব্যক্তি মানুষ গড়ে তুলেছিল গোষ্ঠীও সমাজ। সমাজ বিবর্তনের সঙ্গে মানুষের নিজস্ব প্রয়োজন পুরনে রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে। প্রাচীন সময় থেকেই মানবসভ্যতার ভিন্নতা চিন্তার জগতে অনেকটা ভিন্নতা তৈরি করে যদি সকল ক্ষেত্রে সভ্যতার মৌলিকত্ব ছিল মনুষ্যসমাজের সূক্ষ, সুস্থ জীবন যাপনের পথে এগিয়ে যাওয়া এবং ক্রমন্নোয়নের লক্ষ্যে অগ্রসর হওয়া। এভাবে চিন্তা ও চর্চার ভিন্নতা রাষ্ট্রতত্ত্ব সম্পর্কে চিন্তাচর্চার ভিন্নতার উন্মেষ ঘটায়। এক্ষেত্রে প্রাচ্যমূলত ভারতীয় রাষ্ট্রচর্চা ও পাশ্চাত্য রাষ্ট্রচর্চা মূলত গ্রীস রাষ্ট্রচর্চার দ্বারা অধিকতর প্রভাবিত।

 

প্রাচ্য রাষ্ট্রচর্চার ক্ষেত্রে আমরা ম্যাক্সমুলার, রমেশচন্দ্র দত্ত, রোমিলা থাপার প্রমুখের নাম করতে পারি যাঁরা প্রাচীন ভারতের রাষ্ট্রব্যবস্থা, আইন, শাসন, বিচার ব্যবস্থা নাগরিক ও রাষ্ট্রীয় প্রশাসন সম্পর্ক প্রভৃতি বিষয়ক আলোচনা করেছে বেদ, উপনিষদ, পুরান, মহাকাব্য, অর্থশাস্ত্র প্রভৃতির উপর ভিত্তি করে।

পাশ্চাত্য রাষ্ট্রচর্চায় আমরা সক্রেটিস, প্লেটো, অ্যারিস্টটল, প্রোটাগোরাস, জর্জিয়াস প্রমুখের নাম করতে পারি যাঁরা প্রাচীন গ্রীক সভ্যতা সমকালীন নগররাষ্ট্র ব্যবস্থা, আইন, শাসন, বিচারব্যবস্থা, নাগরিক ও রাষ্ট্রীয় শক্তির সম্পর্ক প্রভৃতি বিষয়ক আলোচনা করেছেন।


উভয় রাষ্ট্রচর্চাই জনগনের সুষ্ট শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন যাত্রা প্রদান জনকল্যান আদর্শ রাষ্ট্রব্যবস্থা, আইন ব্যবস্থা ও শাসন ব্যবস্থা গঠনের কথা বলে। উদ্দেশ্যগত কিছু সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হলেও তা অর্জনের পদ্ধতিগত পার্থক্য ও দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।


প্রথমতঃ পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচর্চা সংশ্লিষ্ট বিষয়ক অধিকমাত্রায় চর্চা করে এবং তা ছিল সুসংবদ্ধ ও ধারাবাহিক।

তথাপি প্রাচ্য রাষ্ট্রচর্চা বিশেষতম ভারতীয় রাষ্টচর্চায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ক ব্যাখ্যার অধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়নি তৎসহ প্রাচ্যের রাষ্ট্রচর্চা সুসংবদ্ধভাবে বিশ্লেষিত হয়নি।


দ্বিতীয়তঃ পাশ্চাত্যের বিশেষত গ্রীকদের রাষ্ট্রচর্চা ধর্মীয় প্রেরণা বিশেষ ভূমিকা পালন করেনি।

অন্যদিকে প্রাচ্যের রাষ্ট্রচর্চা ধর্মীয় দর্শন ও বিধিব্যবস্থা দ্বারা অধিকতর প্রভাবিত হয়। 


তৃতীয়তঃ প্রাচীন গ্রীসে নাগরিকদের যোগ্যতা অনুযায়ী গুরুত্ব বিবেচিত হওয়ার প্রতি অধিক আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়।

পক্ষান্তরে প্রাচ্যের রাষ্ট্রচর্চায় মানুষের জন্ম বংশ, জাতপাত,বর্ণ প্রভৃতির গুলি যোগ্যতা নির্ধারণের মাপকাঠি হিসেবে বিবেচিত হওয়ার প্রতি অধিকতর আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়।


চতুর্থতঃ গ্রীক রাষ্ট্রচর্চায় মানুষকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস পরিলক্ষিত হয়। 

অন্যদিকে প্রাচ্য রাষ্ট্রচর্চায় তুলনামূলক ভাবে দেবদেবীকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে তুলে ধরার প্রয়াস অধিকতর পরিলক্ষিত হয়।


পঞ্চমতঃ পাশ্চাত্য রাষ্ট্রচর্চায় সংলাপধর্মী বাগ্‌বিদ্যার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়। 

যা প্রাচ্যের রাষ্ট্রচর্চায় তুলনামূলক ভাবে ছিল কম।


ষষ্টতঃ পাশ্চাত্য বিশেষ গ্রীক রাষ্ট্রতত্ত্ব চর্চায় উপনিবেশিক মনোভাবের উদ্ভূত স্বরূপ ব্যাখ্যা অনুপস্থিত। 

    অন্যাদিকে প্রাচ্য বিশেষত ভারতীয় রাষ্ট্রচর্চা বিষয়ক কিছু নঞর্থক ব্যাখ্যা পাওয়া যায় যা মূলত ঔপনিবেশিক মনোভাব থেকে উদ্ভুত।

 

সবশেষে বলা যায়, প্রাচীন পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রতত্ত্বে রাষ্ট্র ও পুরসমাজের সম্পর্ক বিষয়ে পরস্পর বিরোধী তত্ত্ব প্রচারিত হয়। উভয়ের মধ্যে সামঞ্জস্যমূলক সম্পর্ক থাকা প্রয়োজন বলে ব্যাখ্যা হয় যদি ভারতীয় চর্চায় সমাজকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল। এক্ষেত্রে ব্যক্তির নৈতিক দায়বদ্ধতায় সমাজ ও রাষ্ট্রকে বহন করার উপর গুরুত্ব আরোপিত হয়। সর্বোপরি একথা অনস্বীকার্য সে-প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য রাষ্ট্রচর্চা সময়ের প্রয়োজনে ব্যাখ্যা হওয়া নিজ নিজ আর্থসামাজিক সংস্কৃতিক পরিস্থিতি নির্ভর ও ব্যাখ্যাকারদের নিজ নিজ অভিজ্ঞতা ও দূরদর্শি চিন্তাধারার বহিঃপ্রকাশ। অর্থাৎ রাষ্ট্রতত্ত্বগুলি কালানুক্রমিকতার সাথে সাথে ভৌগোলিকতাতেও নির্ভরশীল।

   কলমে - ড. বসুবন্ধু সেগুপ্ত

Post a Comment

1 Comments

Thank you for contacting jibonta.in! Please let us know how we can help you.