অধিকার সম্পকে লক - Lock on Rights

অধিকার সম্পকে লক-Locke on Rights

অধিকার সম্পকে লক - Lock on Rights

অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক

। লকের লেখা কয়েকটি গ্রন্থের নাম লেখ।

উঃ 'Two Treatises on civil Government", এবং 'Letter on Toleration' প্রভৃতি।


। লক কোন দেশের মানুষ ছিলেন?

উঃ লক ইংল্যান্ডের মানুষ ছিলেন।


। লককে কেন অভিজ্ঞাতাবাদের জনক বলা হয়?

উঃ লকের মতে সহজাত ধারণা বলে কিছু নাই। তাঁর মতে যে কোন ধারণাই অভিজ্ঞতালব্ধ। তিনি জ্ঞানকেও অভিজ্ঞতা প্রাপ্ত বলে উল্লেখ করেন। তাই তাঁকে অভিজ্ঞতাবাদের জনক বলা হয়।


। লকের মতে মানবপ্রকৃতি কিরূপ? 

উঃ লকের মতে চরিত্রগত দিক থেকে মানুষ সামাজিক, যুক্তিবাদী, শান্তিকামী,নৈতিক, নম্র ও আকাঙ্খাবাদী।


। লকের মতে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব বা পুরসমাজের পূর্বে মানুষ কোন সমাজে বাস করত?

উঃ লকের মতে পুরসমাজের পূর্বে মানুষ প্রকৃতির রাজ্যে বাস করত।


। লকের নিকট স্বাভাবিক অধিকারের সংজ্ঞা কি? 

উত্তর। লকের মতে প্রাক্ রাজনৈতিক সমাজে প্রকৃত আইনের দ্বারা মানুষ যুক্তিবোধ ও বিবেকের দ্বারা পরিচালিত হয়ে জীবন, স্বাধীনতা ও সম্পত্তির অধিকার ভোগ করত তাহা স্বাভাবিক অধিকার।


। লক উল্লিখিত যেকোন দুটি স্বাভাবিক বা প্রকৃতিক অধিকার লেখ।

উত্তর। জীবনের অধিকার ও স্বাধীনতার অধিকার।


। লক কেন সম্পত্তির অধিকারের পক্ষে সাওয়াল করেছেন? 

উত্তর। লকের মতে সম্পত্তির অধিকার স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক অধিকার এবং স্বাধীনতা ও জীবনের অধিকার এই সম্পত্তির অধিকারে অন্তর্ভুক্ত তাই লক সম্পত্তির অধিকারের ধারনার পক্ষে সাওয়াল করেছেন।


। লকের বর্ণিত অধিকার সমূহ কোন আইনের দ্বারা রূপায়িত হওয়ার উল্লেখ পাওয়া যায়?

উত্তর। প্রাকৃতিক আইনের দ্বারা।

১। লক বর্ণিত প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক অধিকার কি তাহা উল্লেখ কর। 

উত্তর। সপ্তদশ শতকের ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলের প্রয়োজনে লকের চিন্তাধারার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। লকের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশিত হয় 'Two Treaties of on Civil Government' নামক গ্রন্থে। ব্যক্তি নাগরিকের স্বাভাবিক অধিকারের প্রবক্তা ছিলেন লক।

লকের ব্যাখ্যা অনুযায়ী মানুষ জন্মানোর সাথে সাথে তার জীবনের উপলব্ধির জন্য অহস্তান্তর যোগ্য কতকগুলি অধিকার ভোগ করে। এগুলি স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক অধিকার। লক বর্ণিত প্রকৃতির রাজ্যে এই অধিকারগুলি সহজাত। এগুলি হল সাম্যের অধিকার, স্বাস্থ্যের অধিকার, স্বাধীনতার অধিকার এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার। প্রকৃতির রাজ্যে মানুষ এক ব্যক্তি কর্তৃক অপর ব্যক্তির অধিকার ভঙ্গ করলে ভঙ্গকারীকে শাস্তি দেবার অধিকার ভোগ করে। তবে প্রকৃতির রাজ্যের পরিবর্তে পৌর সমাজ গড়ে ওঠার সাথে সাথে আইন ভঙ্গকারীকে শাস্তিদেবার অধিকার হস্তান্তরিত হয়।

 স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক অধিকারগুলি স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক আইনের মাধ্যমেই বাস্তবায়িত হত। স্বাভাবিক অধিকারগুলির মধ্যে অন্যতম সাম্যের অধিকার লকের মতে, সাম্যের অধিকার বলতে প্রত্যেকেই প্রকৃতির অধিকার ও স্বাধীনতা অন্য কারো দ্বারা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে ভোগ করতে পারবে।

 লকের ব্যাখ্যায় জীবনের অধিকার অন্যতম স্বাভাবিক অধিকার যা ঈশ্বর ব্যতীত কেউ খর্ব করতে পারবে না। লকের মতে কোন ব্যক্তি যেমন অন্যের জীবনের অধিকার হরণ করতে পারে না তেমনি নিজের জীবনও নষ্ট করতে পারে না। 

লক স্বাস্থ্যের অধিকারকে অন্যতম স্বাভাবিক অধিকার হিসেবে উল্লেখ করেন। লক উল্লেখ করেন, প্রতিটি মানুষ নিজ নিজ স্বাস্থ্য সুরক্ষিত করার অধিকার ভোগ করবে। জীবনের অধিকারের সাথে সাথে জীবনভোগের অধিকারকেই লক স্বীকৃতি দিয়েছেন। লক ব্যক্তি বা মানুষের অপর একটি স্বাভাবিক অধিকারের কথা উল্লেখ করেন তা হল স্বাধীনতার অধিকার। লকের মতে প্রকৃতির রাজ্যে একমাত্র প্রাকৃতিক আইন ব্যতীত মানুষ সকল কিছুই ক্রয় বিক্রয় করতে পারত। ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকারকে স্বাভাবিক অধিকার হিসেবে লক বর্ণনা করেন। তাঁর মতে মানুষ তার শ্রমের দ্বারাই প্রাকৃতিক সম্পদকে ব্যবহার করেন।

সর্বোপরি বলা যায়, লকের মতে, সকল মানুষ প্রকৃতিগত ভাবেই সমান অবস্থায় প্রাকৃতিক সম্পদের অধিকারী। লক সম্পত্তির অধিকারের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেন। তাঁর মতে মানুষের জীবন ও স্বাধীনতা তাঁর সম্পত্তি। 


২। লক বর্ণিত প্রকৃতির রাজ্য সম্পর্কে একটি টীকা লেখ।

উঃ রাজনৈতিক ব্যাখ্যায় লক তাঁর আলোচনায় হবসীয় জড়বাদী ও পার্থিব দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করেন। রাষ্ট্র ও সমাজ সম্পর্কিত ব্যাখ্যায় লক দেবতত্ত্ব ও অধিবিদ্যাগত দৃষ্টিভঙ্গি বর্জন করেন এবং গ্রহণ করেন ইন্দ্রিয়জ অভিজ্ঞতা ভিত্তিক যা পর্যবেক্ষণ ও মননমূলক। হবসীয় ব্যাখ্যার ন্যায় লকও আনুগত্যকে স্বতসিদ্ধ বলে ব্যাখ্যা করেন নি। এক্ষেত্রে লক হবস বর্ণিত প্রকৃতির রাজত্বের মডেল গ্রহণ করেন তবে প্রকৃতির রাজত্ব সম্পর্কিত পূর্ণ ব্যাখ্যায় তিনি হবসীয় প্রকৃতির রাজত্ব ব্যাখ্যা থেকে সরে আসেন। লকের লেখা ‘টুট্রিটিজ অন সিভিল গভর্নমেন্ট' গ্রন্থে তাঁর সংশ্লিষ্ট বিষয়ক আলোচনা পাওয়া যায়। লক বর্ণিত প্রকৃতির রাজত্ব হবসের নিসঙ্গ, সংকীর্ণ, ঘৃণ্য, পাশবিক ও স্বল্পস্থায়ী প্রকৃতির রাজত্ব নয়, বরং লকের বর্ণিত প্রকৃতির রাজত্ব তুলনামূলক সভ্য। এই সভ্য সমাজে প্রতিটি ব্যক্তি যুক্তিসিদ্ধ, সচেতন এবং দায়িত্বশীল থাকায় লক বর্ণিত প্রকৃতি রাজ্যে কোন বিশৃঙ্খলা দেখা যায় নি। লকের প্রকৃতির রাজ্য ছিল প্রাক্-রাজনৈতিক তবে প্রাক্-সামাজিক নয়। তাঁর মতে, প্রকৃতির রাজত্বে পূর্ণ স্বাধীনতা ও সাম্য বিরাজ করত। 

লক বর্ণিত প্রকৃতির রাজত্বে সকল মানুষ তার জীবন, স্বাধীনতা ও সম্পত্তি রক্ষার অধিকার ভোগ করে। এই রাজত্বে স্বাভাবিক আইন সকলে মান্য করে তাই অধিকার ভোগ সম্ভব ছিল। এই অধিকার ছিল বাস্তব, অবাধ, চিরন্তন ও সর্বজনীন। তিনি বলেন মানুষ জীবন, স্বাধীনতা ও সম্পত্তির অধিকার যেমন ভোগ করত তেমনি স্বাভাবিক আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বা পরিচালিত হত। লকের নিকট স্বাভাবিক মানব চরিত্র যুক্তিশীল। তাঁর মতে প্রকৃতির রাজ্যে মানুষ অপরের ইচ্ছাধীন ছিল। প্রকৃতির রাজ্যে মানুষ নিজের বিবেক ও যুক্তিবোধ অনুযায়ী বসবাস করত। যুক্তি বিধি তথা প্রাকৃতিক নিয়ম মান্য করে মানুষ যে ব্যক্তি স্বাধীনতা ভোগ করত তা সুরক্ষিত ছিল। তাঁর মতে, প্রকৃতির রাজ্যে প্রাকৃতিক আইন বা স্বাভাবিক আইন মানুষের মধ্যে ন্যায়পরায়নতার ভাব সদিচ্ছা, বন্ধুত্বপূর্ণ পারস্পরিক সম্পর্ক গঠনে সহযোগিতা করেছিল। এই আইন অন্যের জীবন, স্বাস্থ্য, সম্পত্তির ক্ষতিসাধন না করার মানসিকতা গড়ে তুলেছিল। 

হবসের মতে, প্রাকৃতিক রাজ্যে একে অপরের অধিকার লঘু করা বা আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকত। প্রকৃতির রাজ্যে যুক্তিবোধই ছিল স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক আইন। সাধারণ ভাবে বলা যায়, প্রকৃতির রাজ্যে শান্তি, সুশৃঙ্খলা ও স্থিতি বিরাজ করত। স্বাধীনতা ও সাম্য ছিল প্রতিষ্ঠিত, পাশাপাশি মানুষ ছিল সচেতন ও দায়িত্বশীল।

লকের মতে, প্রকৃতি রাজত্বে সৃষ্ট অসুবিধা ও পারস্পরিক বিবাদ নিষ্পত্তির প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠানিক কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয়তা দেখা যায়। ফলত যে অসুবিধা সৃষ্টি হয় তা দূরীকরণের লক্ষ্যে মানুষ চুক্তি সম্পাদন করল। সাধারণ কর্তৃপক্ষের অনুপস্থিতিতে প্রত্যেকে স্বাভাবিক আইনের ব্যাখ্যায় নিজস্ব মতকেই অন্যদের উপর চাপিয়ে দিতে উদ্যত হত। ফলত প্রকৃতি রাজত্বে অনিশ্চিয়তাপূর্ণ ও বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়। তাছাড়া স্বাভাবিক আইনের ব্যাখ্যার ব্যবস্থা ছিল না। তৎসহ নিয়মভঙ্গের যথাযোগ্য শাস্তি প্রদানের অধিকারী ক্ষমতাসম্পন্ন কোন প্রতিষ্ঠান ছিল না। স্বভাবতই উদ্ভুত সংকট মোকাবিলায় মানুষ চুক্তিবদ্ধ হয়ে প্রাকৃতিক রাজ্য পরিত্যাগ করে সভ্য সমাজ গড়ে তোলে।


৩। সম্পত্তি (Property) সম্পর্কে লকের ধারণার সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ।

উঃ সপ্তদশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ রাজনৈতিক ব্যবস্থার আধুনিকীকরনে ভিত্তির পত্তন ও বুর্জোয়া বিপ্লবের যুগে লকের রাষ্ট্রচর্চা গড়ে ওঠে। লকের রাষ্ট্রচর্চা সমকালের সামাজিক রাজনৈতিক ও আর্থিক ব্যবস্থার প্রভাবে ও ফলশ্রুতিতে গড়ে উঠেছিল। লকের আলোচ্য বিষয়গুলির মধ্যে অধিকার সংক্রান্ত ধারনা অন্যতম। লক মানুষের অর্ন্তর্নিহিত সহজাত অধিকার হিসেবে জীবন ধারনের অধিকার, স্বাধীনতার অধিকার ও সম্পত্তির অধিকারকে মৌলিক বা স্বাভাবিক অধিকার হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।

লকের মতে সম্পত্তির অধিকারের মধ্যেই জীবন ও স্বাধীনতার অধিকার অন্তর্ভুক্ত। লকের মতে, ব্যাপক অর্থে সম্পত্তির অধিকার বলতে জীবন ও স্বাধীনতার অধিকার এবং সংকীর্ণ অর্থে সম্পত্তির অধিকার বলতে কোনো সম্পত্তি অর্জন ও ভোগের অধিকার। লকের মতে, সংকীর্ণ অর্থে শ্রমভিত্তিক ব্যক্তিগত সম্পদ হল সম্পত্তি

লকের ব্যাখ্যা অনুযায়ী মানুষ প্রকৃতির রাজ্য থেকে সভ্য বা পৌর সমাজে পদার্পণ করেছে এবং স্বেচ্ছায় বিধি-নিষেধ মান্য করেছে কারন সম্পত্তির অধিকার সুনিশ্চিত ও নিরাপত্তার শর্তে। লক ব্যক্তিগত সম্পত্তিকে স্বাভাবিক অধিকার হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। 

তাঁর মতে, পৃথিবীর সকল প্রাকৃতিক সম্পদ মানুষের ব্যাহারের জন্য; সাহায্যার্থে ও সুবিধার্থে। তবে সম্পদের ওপর দখল অধিকার ব্যতীত কোন জিনিষ যথার্থ ভোগ সম্ভব নয়। সম্পত্তির উপর নিজস্ব দখলদারী ব্যাখ্যার যুক্তিতে তিনি আরো বলেন ব্যক্তি মানুষের দৈহিক শ্রম ও হাত দ্বারা সম্পাদিত কাজ যে কোন জিনিষকে নিজের শ্রম সৃষ্ট সম্পদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। লক উল্লেখ করেন, মানুষের নিজস্ব শ্রম হল তার যাবতীয় সম্পত্তির অধিকারের উৎস।

সম্পত্তি সম্পর্কে লকের বক্তব্যের অন্যতম দিক হল তাঁর মতে, প্রকৃতিগত দিক থেকে একই অবস্থায় সকল মানুষ সমান অধিকার ভোগ করার অধিকারী।

 তিনি বলেন, ঈশ্বর এই পৃথিবীর সম্পদ সবাইকে সমান ভোগের সুযোগ দিয়েছেন।প্রকৃতির রাজ্যে সবাই সমষ্টিগত সম্পত্তির মালিকানা ভোগ করত। তিনি আরো বলেন, প্রকৃতির রাজ্যে ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার ছিল প্রাকৃতিক আইনের অধীনে এবং তা ছিল উন্নত। ঈশ্বর প্রদত্ত যুক্তি ও বুদ্ধি দিয়ে মানুষ প্রাকৃতিক সম্পদকে নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে শুরু করে। লকের মতে, মানুষ তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও শ্রম সমন্বিত করে প্রকৃতির বস্তুকে ব্যবহার করতে সক্ষম হলে ব্যক্তিগত সম্পদ সৃষ্টি হয়।

লকের সম্পত্তি সংক্রান্ত ব্যাখ্যার অন্যতম দিক হল তাঁর মতে রাষ্ট্র ও সমাজের অন্যতম প্রধান কাজ হল ব্যক্তির সম্পত্তি সুরক্ষিত করা। লকের মতে, মানুষ জীবন ধারনের জন্য ঈশ্বর তাকে সম্পত্তি দান করেছে। মানুষ ঈশ্বরের এই দান অপচয় করতে পারে না। তাই সম্পত্তি আইন সীমাহীন নয়। লকের মতে, অপরিমেয় সম্পত্তি অর্জন অপচয়ের সম্ভাবনা সৃষ্টি করে।

সম্পত্তি সংক্রান্ত ব্যাখ্যা লকের বক্তব্য হল ব্যক্তি বা তার প্রতিনিধির সম্পত্তি ব্যতীত ব্যক্তি সম্পত্তির উপর কোন প্রকার কর আরোপের ক্ষমতা রাষ্ট্র ভোগ করবে না।

লকের সম্পত্তি সংক্রান্ত ব্যাখ্যা পাওয়া যায় যে, সম্পত্তির অধিকার দীর্ঘকাল সমাজে বিদ্যমান। রাষ্ট্র প্রাকৃতিক আইনের মাধ্যমে জীবন, স্বাধীনতা ও সম্পত্তির অধিকার রক্ষা করবে তেমনি সংশ্লিষ্ট অধিকার সমাজের সকলের মধ্যে বলবৎ করনের ব্যবস্থা করবে। তাঁর মতে, সম্পত্তির অধিকার রাষ্ট্র কর্তৃক সৃষ্ট নয়।

উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে বলা যায়, সম্পত্তি সম্পর্কে লক ব্যক্তিগত মালিকানায় বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর নিকট ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলতে মূলত আর্থিক সম্পদ। আর্থিক অসাম্য তাঁর নিকট ছিল দুর্বলতা পূর্ণ। 

প্রবন্ধমূলক উত্তরভিত্তিক

১। অধিকার সম্পর্কে লকের ধারণা ব্যাখ্যা কর। 

উত্তর। আধুনিক যুগের উৎস মুখে চিরায়ত রাজনৈতিক চিন্তানায়কদের মধ্যে অন্যতম জন লক। ইংল্যান্ডের বুর্জোয়া বিপ্লবের যুগের, আধুনিক ব্রিটিশ রাজনৈতিক ব্যবস্থার ভিত্তিপত্তন যে সকল ঘটনাবলীর দ্বারা সংগঠিত হয়েছিল। সেই ঘটনাবলীর অংশীদার জন লক। বুর্জোয়া উদারনৈতিক ব্যবস্থার তাত্ত্বিক ভিত্তি দেন জন লক। সপ্তদশ শতকের শেষে ১৬৮৮ সালে ইংল্যাণ্ডের জনগণ শান্তিপূর্ণ বিপ্লবের মাধ্যমে অধিকারের সনদ আদায় করেন। সপ্তদশ শতাব্দী দ্বিতীয়ার্ধ থেকে ইংল্যাণ্ডে মাঝে মধ্যেই প্রজাতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েমের চেষ্টা হয়। তথাপি রাজতন্ত্র তার নিজস্বতা টিকিয়ে রাখে। আবার আভ্যন্তরী ক্ষেত্রে একাধিক বিপ্লব আন্দোলনের উত্থাপন ইংল্যান্ডের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন দেখা যায়। এরূপ আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে উদারনৈতিক রাষ্ট্রচর্চার অন্যতম ব্যক্তিত্ব ও অগ্রদূত হিসেবে পরিচিত লক তাঁর নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করেন।

ইংল্যান্ডের আধুনিক যুগের সূত্রপাতের পর্বে লক প্রত্যক্ষভাবে ও পরোক্ষভাবে ইংল্যান্ডের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যকে সুদৃঢ় করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাঁর রাষ্ট্রচর্চার মধ্যে রাষ্ট্রের উদ্ভব সম্পর্কে সামাজিক চুক্তির মতবাদ, রাজনৈতিক আনুগত্য, সম্মতি তত্ত্ব, সম্পত্তি তত্ত্ব প্রভৃতি বিষয় মতামত পাওয়া যায়। এই সকল বিষয়গুলির মধ্যে অধিকার সম্পর্কে তাঁর ব্যাখ্যা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

লকের ভিন্নমুখী আলোচনার মধ্যে মানবসমাজে রাজনৈতিক ক্ষমতাকে গুরুত্বসহকারে ব্যাখ্যার প্রয়াস করেন। মানুষের পারস্পরিক সমতার নীতির যৌক্তিকতাকে মান্য করে লক প্রাক্ রাষ্ট্রীয় সমাজে প্রাকৃতিক অধিকারের অস্তিত্বের ব্যাখ্যা করেন। লক জীবনের অধিকার, স্বাধীনতার অধিকার ও সম্পত্তির অধিকার স্বীকার করেন।

প্রাক্ রাষ্ট্রীয় সমাজ লকের নিকট স্বাভাবিক অবস্থা। তাঁর মতে, কালের দিক থেকে স্বাভাবিক অবস্থা হল নাগরিক সমাজের পূর্ববর্তী....একটা বাস্তব পর্ব। লকের মতে স্বাভাবিক অবস্থার চরিত্র হল সামাজিক এবং অপেক্ষাকৃত সুশৃঙ্খল, স্বাভাবিক বিধির নিরিখে তা নিয়ন্ত্রিত। লকের মতে স্বাভাবিক বিধি হল এমন নিয়ম যা সর্বকালে নির্দিষ্ট হচ্ছে মানুষের আচরণ ও সুবুদ্ধি বহিঃপ্রকাশ। এগুলির তাঁর নিকট কখনো ইশ্বরের বিধান, কখনো সুবুদ্ধির আইন, কখনো প্রকৃতির নিয়ম। তাঁর নিকট স্বাভাবিক আইন হল সমুচিত আইন, এমন ন্যায়বোধ যা মানুষের প্রকৃতিগত এবং নিজের চাহিদা ও দাবিকে অলঙ্ঘনীয় অধিকার বলে জ্ঞান করতে তাঁকে প্রবুদ্ধ করে।

লকের মতে, প্রকৃতির নিয়ম, বা সুবুদ্ধি অন্যের জীবন, স্বাস্থ্য, স্বাধীনতা বা সম্পত্তির ক্ষতি না করার শিক্ষা দেয় লোককে। তাঁর মতে, আদর্শ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক অবস্থা নিশ্চিত করবে স্বাভাবিক নিয়মের সমস্ত অধিকার ও সুবিধার অবাধ উপভোগ ও পূর্ণ স্বাধীনতা, মানবজাতির জন্য শান্তি ও নিরাপত্তা। লক বলেন এ দুনিয়ায় মানুষ সম্পর্কিত সকল আইনের মতো প্রকৃতির নিয়মও নিষ্ফল যদি স্বাভাবিক অবস্থায় সংশ্লিষ্ট নিয়ম পালন করিয়ে নেবার ক্ষমতা কারো না থাকে এবং তাতে করে নির্দোষকে রক্ষা ও লঙ্ঘনকারীকে দমন না করা হয়।

লক উল্লেখ করছেন, মানুষের স্বাভাবিক অধিকারগুলির সর্বপ্রথমটা যেটার উপর রাজক্ষমতা ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে না তা হল সম্পত্তির অধিকার। তাঁর মতে নাগরিক সমাজ গড়া হয় সম্পত্তির রক্ষার জন্য।

লকের অভিমত হল মানুষ জন্মানোর সাথে সাথে নিজের উপলব্ধির জন্য অহস্তান্তরযোগ্য কতকগুলি অধিকার ভোগ করে। লকের অধিকার সম্পর্কিত ধারণার মূল্য বক্তব্য হল

(i) লক বর্ণিত প্রকৃতির রাজ্যের এই অধিকার গুলি সহজাত।

(ii) অধিকারগুলি স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক যথা সাম্যের অধিকার, স্বাস্থ্যের অধিকার, স্বাধীনতার অধিকার ও ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার। অধিকার ভঙ্গে কারণে শাস্তির ব্যাখ্যাও লক করেছেন। 

(iii) তার ব্যাখ্যা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তির অধিকার ভঙ্গ করলে ভঙ্গকারীকে শাস্তি দেবার অধিকার রয়েছে। 

(iv) লক স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক অধিকার স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক আইনের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হওয়ার ব্যাখ্যা করেন। 

(v) লকের মতে ব্যক্তি অন্যের জীবনের অধিকার হরণ করতে পারবে না নিজের জীবনের অধিকার নষ্ট করতে পারে না।

 সবশেষে বলা যায়, লকের অধিকার সম্পর্কিত ব্যাখ্যা তাঁর সমকালীন রাজনৈতিক, সামাজিক ও আর্থিক পরিস্থিতির বহিঃপ্রকাশ। সমাজ জীবনের বাস্তবতা ও অন্তবিরোধের যে বিমূতায়ন তিনি করেছেন তা বাদ দিলে জনগণের সার্বভৌমত্ব, সম্মতিসহ ব্যক্তির অলঙ্ঘনীয় অধিকার বিষয়ক লকে ব্যাখ্যা প্রগতিশীল উপযোগ আজও অনস্বীকার্য।

   কলমে - ড. বসুবন্ধু সেগুপ্ত


Post a Comment

0 Comments