গণতন্ত্র এবং নেহেরু ও জয়প্রকাশ নারায়ণ-Neheru and Joyaprakash Narayan on Democracy
 |
Neheru and Joyaprakash Narayan on Democracy |
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক
প্রশ্ন ১। গণতন্ত্র বলতে কী বোঝ?
উত্তর। গণতন্ত্র বলতে কোনও জাতিরাষ্ট্রের এমন একটি শাসনব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে নীতি নির্ধারণ বা সরকারি প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিক বা সদস্যের সমান ভোটাধিকার থাকে।
প্রশ্ন ২। 'গণতন্ত্র' শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ লেখ।
উত্তর। ‘গণতন্ত্র’ পরিভাষাটি ইংরেজি ডেমোক্রেসি (Democracy) থেকে এসেছে। এর ইংরেজি শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ 'Demos’ ও ‘kratos' (দেমো ক্রাতিয়া) শব্দ থেকে, যার অর্থ জনগণের শাসন।
প্রশ্ন ৩৷ ‘গণতন্ত্র’ শব্দটি কোন শব্দ থেকে এসেছে এর বাংলা অর্থ কী?
উত্তর। ‘গণতন্ত্র’ শব্দটি গ্রিক শব্দ থেকে এসেছে।
- এর বাংলা অর্থ জনগণের শাসন।
প্রশ্ন ৪। আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক দিবস কত খ্রিস্টাব্দে পালিত হয়? বৃহত্তম
গণতান্ত্রিক দেশের নাম লেখ।
উত্তর। আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক ১৫ই সেপ্টেম্বর পালিত হয়।
- বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দিবস হল ভারত।
প্রশ্ন ৫। আধুনিক গণতন্ত্রের জনক কে, কোন দেশে প্রথম গণতন্ত্র সম্পর্কে ধারণা গড়ে ওঠে?.
উত্তর। আধুনিক গণতন্ত্রের জনক হলেন—জন।
- প্রাচীন গ্রীসে প্রথম গণতন্ত্র সম্পর্কে ধারণা গড়ে ওঠে।
প্রশ্ন ৬। কী ধরনের শাসনব্যবস্থা ব্যক্তি স্বাধীনতার বিরোধী?
উত্তর। একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ব্যক্তি স্বাধীনতার বিরোধী।
প্রশ্ন ৭। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিঙ্কনের মতে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা কী?
উত্তর। আব্রাহাম লিঙ্কনের মতে, "Democracy is a Goverment of the people, by the people and for the people." অর্থাৎ গণতন্ত্র হল জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য, জনগণের শাসন।
প্রশ্ন ৮। কীরুপ সরকারের জন্য অবাধ নির্বাচন অপরিহার্য ?প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র
সম্ভব নয় কোন রাষ্ট্রে ?
উত্তর। 'গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য অবাধ নির্বাচন অপরিহার্য।
- বৃহৎ রাষ্ট্রে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র সম্ভব নয়।
প্রশ্ন ৯। “গণতন্ত্র মুর্খদের জন্য, মূর্খদের দ্বারা মূর্খদের শাসন" কার উ্ক্তি?
উত্তর। গণতন্ত্র মূর্খদের জন্য, মূর্খদের দ্বারা মূর্খদের শাসন—উক্তিটি হল অধ্যাপক কার্লাইল এর।
প্রশ্ন ১০। গণতন্ত্রের দুটি সীমাবদ্ধতা লেখ।
উত্তর। গণতন্ত্রের দুটি সীমাবদ্ধতা হল
(i) অদক্ষদের শাসন,
(ii) স্থায়িত্বের অভাব।
প্রশ্ন ১১। জয়প্রকাশ কবে সমাজতন্ত্রী দল গঠন করেন? এর প্রথম সভাপতি ও সম্পাদক কে ছিলেন?
উত্তর। জয়প্রকাশ ১৯৪৮ সালে সমাজতন্ত্রী দল গঠন করেন।
- প্রথম সভাপতি হলেন নরেন্দ্রদেব ও সম্পাদক হলেন জয়প্রকাশ।
প্রশ্ন ১২। 'ফ্রম সোস্যালিজম টু সর্বোদয়' গ্রন্থটির লেখক কে?
উত্তর। 'ফ্রম সোস্যালিজম টু সর্বোদয়' গ্রন্থটির লেখক হলেন জয়প্রকাশ নারায়ণ।
- গ্রন্থটি ১৯৫৭ সালে প্রকাশিত হয়।
প্রশ্ন ১৩। প্রধানত কার উদ্যোগে 'প্রজা সমাজতন্ত্রী’ দল গঠিত হয়েছিল এবং দলটির লক্ষ্য কী ছিল?
উত্তর। প্রধানত জয়প্রকাশ নারায়ণ-এর উদ্যোগে সমাজতন্ত্রী দল ও কিষান
মজদুর প্রজা পার্টি মিলে ‘প্রজা সমাজতন্ত্রী দল' গঠিত হয়েছিল।
প্রশ্ন ১৪। জয়প্রকাশ নারায়ণ কবে, কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর। জয়প্রকাশ নারায়ণ ১৯০২ সালে ১১ই অক্টোবর উত্তরপ্রদেশের সীমানা লগ্ন বিহারের এক গ্রামে কায়স্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
প্রশ্ন ১৫। জয়প্রকাশ নারায়ণ সারা ভারতে কী নামে পরিচিত?
উত্তর। জয়প্রকাশ নারায়ণ সারা ভারতে ‘লোকনায়ক’ নামে পরিচিত।
প্রশ্ন ১৬। জয়প্রকাশ কত সালে কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল গঠন করেন?
উত্তর। জয়প্রকাশ নারায়ণ ১৯৩৪ সালে কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল গঠন করেন।
প্রশ্ন ১৭। কত সালে, কার লেখা 'Why Socialism' প্রকাশিত হয়?
উত্তর। ১৯৩৬ সালে জয়প্রকাশের লেখা 'Why Socialism' প্রকাশিত হয়।
প্রশ্ন ১৮। জয়প্রকাশের লেখা দুটি গ্রন্থের নাম লেখ।
উত্তর। জয়প্রকাশের লেখা দুটি গ্রন্থের নাম হল
(i) Why Socialism (1936)
(ii) 'My Picture of Socialism' (1946).
প্রশ্ন ১৯। জয়প্রকাশের ভাষায় মার্কসবাদ কী নামে পরিচিত?
উত্তর। জয়প্রকাশের ভাষায় মার্কসবাদ 'Science of Society' নামে পরিচিত।
প্রশ্ন ২০। কে কত সালে গান্ধীবাদকে "একটি প্রতিক্রিয়াশীল তত্ত্ব বা বিপজ্জনক মতবাদ বলে অভিহিত করেছিলেন?
উত্তর। জয়প্রকাশ নারায়ণ ১৯৩৬ সালে গান্ধীবাদকে একটি প্রতিক্রিয়াশীল তত্ত্ব বা বিপজ্জনক মতবাদ বলে অভিহিত করেছিলেন।
প্রশ্ন ২১। মার্কসবাদ সম্পর্কে জয়প্রকাশের দৃষ্টিকোণের দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্য লেখ।
উত্তর। মার্কসবাদ সম্পর্কে জয়প্রকাশের দৃষ্টিকোণের দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল
- সকল রকম শোষণের অবমান এবং সাম্য, স্বাধীনতা ও সৌভ্রাতৃত্বের আদর্শ মার্কসবাদে বর্তমান।
- মার্কসবাদ বৈজ্ঞানিক সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত তাঁর ভাষায় মার্কসবাদ 'Science of Society' অর্থাৎ সমাজের বিজ্ঞান।
প্রশ্ন ২২। 'My Picture is Socialism' গ্রন্থটি কার লেখা? গ্রন্থটি কত সালে প্রকাশিত হয়?
উত্তর। “My Picture is Socialism' গ্রন্থটি জয়প্রকাশ নারায়ণ-এর লেখা।
- গ্রন্থটি ১৯৪৬ সালে প্রকাশিত হয়।
প্রশ্ন ২৩। জয়প্রকাশ বর্ণিত সমাজতন্ত্রী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রধান দুটি কাজ লেখ।
উত্তর। জয়প্রকাশ বর্ণিত সমাজতন্ত্রী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রধান দুটি কাজ হল—
- সমাজবাদী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সৎ জীবনবোধের মাধ্যমে মূল্যবোধের পরিবর্তন সঠিক ব্যক্তিকে আদর্শ নাগরিকে পরিণত করা।
- সমাজবাদী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আর একটি প্রধান কাজ হল ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলের স্বার্থপুরণ ও সকলের সুষম উন্নতিবিধান এবং সকলের ব্যক্তি স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক সুযোগ-সুবিধা বজায় রাখা।
প্রশ্ন ২৪। জয়প্রকাশ নারায়ণ কি কি সম্মাননা ভূষিত হয়েছিলেন? কত খ্রিঃ তিনি ম্যাগসেসে পুরস্কার পেয়েছিলেন?
উত্তর। জয়প্রকাশ নারায়ণ ১৯৯৯ সালে ভারতরত্ন পেয়েছিলেন মরণোত্তর।
- ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে পাবলিক সার্ভিস এর জন্য ম্যাগসেসে পুরস্কার পেয়েছিলেন।
প্রশ্ন ২৫। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের হিরো নামে কে পরিচিত ছিলেন?
উত্তর। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের হিরো নামে পরিচিতি ছিলেন জয়প্রকাশ নারায়ণ।
প্রশ্ন ২৬। কত খ্রিস্টাব্দে পিপলস সোস্যালিস্ট পার্টি গঠন করেন?
উত্তর। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে পিপলস সোস্যালিস্ট পার্টি গঠন করেন।
প্রশ্ন ২৭। কেন্দ্রে প্রথম অকংগ্রেস সরকার কার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?
উত্তর। কেন্দ্রে প্রথম অকংগ্রেস সরকার জয়প্রকাশ নারায়ণ-এর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
প্রশ্ন ৩৮। গণতন্ত্রের দুটি সুবিধা লেখ।
উত্তর। গণতন্ত্রের দুটি সুবিধা হল
- দেশপ্রেম জাগরিত করা
- দায়িত্বশীলতা
প্রশ্ন ২৯। একনায়কতন্ত্র বলতে কী বোঝ?
উত্তর। পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের শাসনব্যবস্থা জন্ম নিয়েছে। যেমন রাজতন্ত্র,
গণতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র। তাদের মধ্যে নিন্দিত শাসনব্যবস্থা হল একনায়কতন্ত্র।
প্রশ্ন ৩০। জওহরলাল নেহেরুর জন্ম মৃত্যু সাল লেখ?
উত্তর। জওহরলাল নেহেরুর জন্ম ১৪ই নভেম্বর ১৮৮৯ এবং মৃত্যু ২৭ মে ১৯৬৪।
প্রশ্ন ৩১। স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর নাম কি? কত খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ওই পদে আসীন ছিলেন?
উত্তর। স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর নাম পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু। তিনি মৃত্যুর আগের মুহূর্ত পর্যন্ত (১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দ) ওই পদে আসীন ছিলেন।
প্রশ্ন ৩২। কত খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়েছিলেন?
উত্তর। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন।
প্রশ্ন ৩৩। কত খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের লাহোর অধিবেশনে দলের সভাপতি নির্বাচিত হন?
উত্তর। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের লাহোর অধিবেশনে দলের সভাপতি নির্বাচিত হন।
প্রশ্ন ৩৪। ওহরলাল নেহেরুর দুটি উক্তি উল্লেখ করো।
উত্তর। (১) সংস্কৃতি মন এবং আত্মাকে প্রশস্ত করে। (২) জীবন হল কার্ড খেলার মতো। যেখানে হাত আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করে। কীভাবে আপনি জীবনে এগিয়ে যাবেন, পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করবেন।
(৩) মানুষের জীবনে ব্যর্থতা তখনই আসে, যখন মানুষ আদর্শ, উদ্দেশ্য ও নীতিগুলি ভুলে যায়।
প্রশ্ন ৩৫। কোন দিনটি শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয়?
উত্তর। ১৪ই নভেম্বর দিনটি শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয়।
প্রশ্ন ৩৬। নেহেরুর আত্মজীবনীর নাম কি?
উত্তর। নেহেরুর আত্মজীবনীর নাম 'an Autobiography'
প্রশ্ন ৩৭। “Discovery of India' গ্রন্থটি কার রচনা?
উত্তর। 'ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া' গ্রন্থটি জওহরলাল নেহেরুর রচনা।
প্রশ্ন ৩৮। পণ্ডিত নেহেরু কত খ্রিস্টাব্দে ভারতরত্ন পান?
উত্তর। পণ্ডিত নেহেরু ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতরত্ন উপাধি পান।
প্রশ্ন ৩৯। নেহেরু প্রকাশিত সংবাদপত্রটির নাম কি?
উত্তর। নেহেরু প্রকাশিত সংবাদপত্রটির নাম হল 'ন্যাশনাল হেরাল্ড' পত্রিকা (National Herald)
প্রশ্ন ৪০। “Glimpses of World History"—বইটি কার লেখা?
উত্তর। জওহরলাল নেহেরু।
প্রশ্ন ৪১। নেহেরু কতবার নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন?
উত্তর। নেহেরু এগারো বার নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন।
প্রশ্ন ৪২। নেহেরু রচিত কয়েকটি বিখ্যাত গ্রন্থের নাম লেখ।
উত্তর। নেহেরু রচিত কয়েকটি গ্রন্থের নাম
- একটি আত্ম জীবনী (an autobiography)
- Discovery of India.
প্রশ্ন ১। গণতন্ত্রের সুবিধাসমূহ আলোচনা কর।
উত্তর। বর্তমান সময়ে গণতন্ত্র সর্বোৎকৃষ্ট শাসন ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচিত হয়। গণতন্ত্রের বেশকিছু সুবিধা রয়েছে। গণতন্ত্রের সুবিধাসমূহ নিন্মোলোচিত
(ক) দেশপ্রেম জাগরিত করা :
গণতন্ত্র জনগণের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত করতে পারে। কারণ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় প্রত্যেকেই অংশগ্রহণ করতে পারে।
- স্থায়িত্ব : স্থায়িত্ব হল গণতন্ত্রের অন্যতম উল্লেখযোগ্য গুণাগুণ। জনগণের সম্মতির উপর এরূপ শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত বলে সরকারের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা প্রদর্শন করে।
(গ) রাজনৈতিক চেতনাবৃদ্ধির সহায়ক :
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় ধনী-দরিদ্র, অভিজাত-অভাজন, স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক ও সুস্থ বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শাসনকাল পরিচালনায় অংশগ্রহণ করতে পারে।
(ঘ) আইনের শাসন :
সুশাসনের অন্যতম উপাদান হল আইনের শাসন। আইনের শাসন নীতিটি হল জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের আইনের সমান অধিকার লাভ করা। আইনের শাসন যদি মেনে না হয় তাহলে যে রাষ্ট্রের শান্তি-স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়ে যায়।
(ঙ) সরকারের স্বৈরাচারিতা রোধ :
গণতন্ত্র জনমত পরিচালিত শাসনব্যবস্থা বলে সরকার জনমতের জয়ে সাধারণ স্বৈরাচারী হতে পারে না।
(চ) দায়িত্বশীলতা :
গণতন্ত্রকে দায়িত্বশীল সরকার বলা হয়। কার্যয়িতের সম্মতিতে যেহেতু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত এবং শাসনকার্য পরিচালিত হয় তাই গণতন্ত্র জনগণের নিকট দায়িত্বশীল থাকে।
প্রশ্ন ২। গণতন্ত্র বলতে কী বোঝ? গণতন্ত্রের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ আলোচনা কর।
উত্তর। গণতন্ত্র বলতে কোনও জাতিরাষ্ট্রের এমন একটি শাসনব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে নীতিনির্ধারণ বা সরকারি প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিক বা সদস্যের সমান ভোটাধিকার থাকে। গণতন্ত্রে আইন প্রস্তাবনা, প্রণয়ন ও তৈরির ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের অংশগ্রহণের সমান সুযোগ রয়েছে, যা সরাসরি বা নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে হয়ে থাকে।
- গণতন্ত্র কথাটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হল—'Democracy | এই শব্দটি দুই গ্রিক শব্দ 'Demos' ও 'Kratos থেকে এসেছে। Demos এর অর্থ হল জনগণ এবং Kratos-এর অর্থ হল শাসন। সুতরাং আক্ষরিক অর্থে জনগণের শাসনকে বলে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা।
জনগণের দ্বারা (by the people) বলতে সমগ্র জনগণের দ্বারা বোঝালেও বর্তমান রাষ্ট্রের বৃহৎ আয়তনের জন্য জনগণ প্রতিনিধি নির্বাচন করে। যে দলের সংখ্যা গরিষ্ঠ হয়, তারাই দেশ শাসন করে। সেই কারণে বর্তমান গণতন্ত্রকে বলা হয় প্রতিনিধিমূলক গণতন্ত্র।
জনগণের শাসন বলতে বোঝায় জনগণের প্রয়োজন, ইচ্ছানুসারে সরকার নীতি নির্ধারণ করবে।
প্রশ্ন ৩। গণতন্ত্রের সীমাবদ্ধতা আলোচনা কর।
উত্তর। গণতন্ত্রের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কিত বিভিন্ন আলোচনা করা হল-
(ক) স্থায়িত্বের ঘাটতিঃ
হেনরী মেইনের মতে, স্থায়িত্বের ঘাটতি গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান ত্রুটি। অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় যে, জনগণ কর্তৃক পরিচালিত শাসনব্যবস্থায় পরস্পবিরোধী স্বার্থের দ্বন্দু থাকার ফলে শাসনকার্য যাবতীয় ভাবে পরিচালনা করা সরকারের পক্ষে অসম্ভব।
(খ) দলীয় শাসনের কুফল ঃ
দল প্রথা গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় অপরিহার্য অঙ্গ। কিছু রাজনৈতিক দলগুলির রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের দ্বন্দ্ব অনেক সময় সংঘর্ষে রূপান্তরিত হয়ে দেশের শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্ট করে।
(গ) ব্যয়বহুল ঃ
অনেকে গণতন্ত্রের ব্যয়বহুল শাসনব্যবস্থা বলে সমালোচনা করেন। জনমত গঠন, নির্বাচন অনুষ্ঠান পদ্ধতির পেছনে গণতন্ত্রে বিপুল পরিমান অর্থের অপচয় হয়।
(ঘ) রক্ষণশীল ব্যবস্থা ঃ
জনপ্রিয়তা ধরে রাখার জন্য অনেক মনোযোগ দিতে হয়। বিধায় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার জনপ্রতিনিধিরা গতানুগতিকতার উর্ধ্বে উঠতে পারে না।
(ঙ) অদক্ষদের শাসন ঃ
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হয়। কিন্তু অনেক দেশে জনগণের বিপুল অংশ নানাবিধ অজ্ঞতা, কুসংস্কারগ্রস্ত থাকে। এ ধরনের জনসমাজের মধ্যে থেকে উঠে আসা জনপ্রতিনিধিদের অনেকের মধ্যেও, এসব দুর্বলতা বিরাজ করে।
(চ) দীর্ঘসূতিতা ঃ
অনেকে অনুমান করে যে, গণতন্ত্রে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় সরকার বিভিন্ন বিভাগের সাথে পরামর্শ করে থাকে।
(ছ) সংখ্যালঘু স্বার্থ উপেক্ষিত ঃ
গণতন্ত্র সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন হওয়ার কারণে সংখ্যাগরিষ্ঠরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে আইনসভায় প্রতিনিধি প্রেরণ করতে পারে না। এভাবে তাদের কার্য ক্রমাগত উপেক্ষিত হয়।
পরিশেষে বলা যায় যে, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে যেসব যুক্তির অবতারণা করা হয় তাদের অনেকগুলো ভিত্তিহীন এবং কল্পনাপ্রসূত বলে মনে করা হয়। লর্ড ব্রাইসের মতে, গণতন্ত্র হয়তো বিশ্বমানবের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগরিত করতে পারেনি, হয়তো শ্রেষ্ঠ শিক্ষিত মনকে রাষ্ট্রের কার্যে নিয়োগ করতে সমর্থ হয়নি, হয়তো রাজনীতির ত্রুটিমুক্ত করতেও ব্যর্থ হয়েছে। আবার একথাও বলা যাবে যে, অন্যান্য শাসনব্যবস্থার তুলনায় আজকের গণতন্ত্র নিজেকে অনেকটাই সাধারণ মানুষের মনের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে।
প্রশ্ন ৪। গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা কর।
উত্তর। গণতন্ত্রের কতকগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল
(ক) নিয়মাতান্ত্রিক উপায়ে সরকারকে পরিবর্তন করা যায় না।
(খ) লক্ষ্য করতে হবে উক্ত শাসনব্যবস্থায় প্রাপ্ত বয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সরকার গঠিত হয় কী না।
(গ) জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিকের স্বার্থর রক্ষার সুবন্দোবস্ত রয়েছে কিনা।
(ঘ) উক্ত ব্যবস্থার দল গঠন, মত প্রকাশ ও সমালোচনার অধিকার স্বীকৃত রয়েছে কিনা।
(ঙ) উক্ত ব্যবস্থায় প্রত্যেক নাগরিকের ব্যক্তিত্ব বিকাশের উপযোগী রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকারসমূহ আইনগত ভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে কিনা।
(চ) জনসাধারণ এ আশ্বাস পেয়েছে কিনা যে, সুষ্ঠু বিচার ব্যবস্থা তাদের অহেতুক বন্দীদশা ভোগ করতে হবে না, অথবা অন্য কোন শাস্তি ভোগ করতে হবে না।
প্রশ্ন ৫। গণতন্ত্র কত প্রকার ও কী কী? আলোচনা কর।
উত্তর। গণতন্ত্র দুপ্রকার। যথা-
- প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র
- পরোক্ষ গণতন্ত্র।
নিম্নে এই দুই প্রকার গণতন্ত্র সম্পর্কে আলোকপাত করা হল-
(ক) প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র ঃ
আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রত্যক্ষ ভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার বা শাসনব্যবস্থা গঠন করা হয় তা হচ্ছে প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। অর্থাৎ প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র বলতে বোঝায় এমন এক সরকারকে যেখানে দেশের সকল নাগরিক সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ পূর্বক শাসনকার্যে অংশগ্রহণ করে রাষ্ট্র পরিচালনা করে। বর্তমানে রাষ্ট্রের পরিধি ও জনসংখ্যার আকৃতি বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বেশ জটিল ও কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই বর্তমানকালে প্রত্যক্ষ শাসনব্যবস্থা পৃথিবীর খুব একটা বেশি দেশে চোখে পরে না। তবে বর্তমানকালে সুইজারল্যান্ডের কয়েকটি প্রদেশে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র প্রচলিত রয়েছে / হয়েছে।
(খ) পরোক্ষ গণতন্ত্র ঃ
যে গণতন্ত্রে পরোক্ষভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ সরকার নির্বাচন করে
তাকে পরোক শাসনব্যবস্থা বলা হয়। অর্থাৎ পরোক্ষ গণতন্ত্র বলতে বোঝায়
সেই ধরনের শাসনব্যবস্থা যেখানে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিগণ
শাসনকার্য পরিচালনা করে। এই জাতীয় শাসনব্যবস্থায় জনগণ সরাসরি নির্বাচনের
মাধ্যমে সরকার গঠন না করে নিজ নিজ এলাকার প্রতিনিধি নির্বাচন করে
পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রীয় কাজে অংশগ্রহণ করে থাকে। এই জন্যেই একে পরোক্ষ
গণতন্ত্র বলা হয়ে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশ, ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতি
রাষ্ট্রে এ ধরনের শাসনব্যবস্থা প্রচলিত আছে।
প্রবন্ধ মূলক প্রশ্ন উত্তর ঃ
প্রশ্ন ১। জয়প্রকাশ নারায়ণের গণতান্ত্রিক ধারণাটি আলোচনা কর।
উত্তর। জয়প্রকাশ নারায়ণ ছিলেন ভারতের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি, কংগ্রেস সোস্যালিস্ট পার্টির অন্যতম পুরোধা ও সমাজতন্ত্র সম্পর্কে একজন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি। তাঁর অন্যতম পরিচয় হল যে লোকশক্তির অপরিসীম গুরুত্বকে নানাক্ষেত্রে তুলে ধরার কারণে তিনি সমগ্র ভারতে ‘লোকনায়ক' নামে পরিচিত ছিলেন। তার আরও এক পরিচয় পাওয়া যায় যে, তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ বিপ্লব নামক এক অভিনব বিপ্লবের ধারণার অবস্তা। তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দীর লোক। তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে ১২ অক্টোবর এবং মারা গিয়েছিলন ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে ৮ অক্টোবর।
সাধারণ সমাজভগ্নে উত্তরণের গন্থা হিসেবে জয়প্রকাশ নারায়ণ কোনো গোড়ামির পরিবর্তে পরিস্থিতি বিচার করে সিদ্ধান্ত নেবার পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। তাঁর মতে মার্কস সহিংস ও শান্তিপূর্ণ দুধরনের বিপ্লবের সম্ভাবনাময় উল্লেখ করেছেন। ফলে 'We must be ready to adopt whatever methods and tactics a changing situation might demand.
এই খোলামন সত্ত্বেও কিন্তু J.P. শান্তিপূর্ণ পদ্ধতির দিকেই বেশি ঝুঁকেছেন। তাঁর মতে, মার্কসের সময়কালের তুলনায় রাজনৈতিক গণতন্ত্র বেশি প্রসারিত হয়েছে। ধনতন্ত্রের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও আদর্শগত শক্তি ইউরোপে সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে। ব্রিটেনেও তার দুর্বলতা বেড়েছে বহুগুণ। আর এসবের ফলে শাস্তিপূর্ণ পথে সমাজতন্ত্রে বহুগুণ। আর এসবের ফলে শাস্তিপূর্ণ পথে সমাজতন্ত্রে উত্তরণের সম্ভাবনাও বেড়েছে বহুগুণ।
ব্যক্তিগতভাবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিই যে তাঁর পছন্দ একই নিবন্ধে সেকথাও জানিয়েছেন জে. পি. - Speaking for my self. I would choose the democratice member the goal I have laid down in that of democratic Socialism.
১৯৪৭-এর স্বাধীনতার অব্যবহিত আগে এবং ১৯৫৩ সালে পুনর্বার জে.পি এই আসা ব্যক্ত করেছেন যে ভারতবর্ষের গণতান্ত্রিক বাতাবরণে শান্তিপূর্ণ পথে সমাজতন্ত্রে উত্তরণ সম্ভব বলেই তিনি বিশ্বাস করেন।
তবে তিনি বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় দলহীন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিশ্বাসী ছিলেন। তার মতে, জনগণের সহযোগিতামূলক গণতন্ত্র হল দলহীন গণতন্ত্র। যার অবস্থিতি লক্ষ্য করা যায় জনশক্তি বা লোকশক্তির অধীনে, দল বা রাষ্ট্রের অধীনে নয়। বস্তুতর সভা, মিছিল, ধর্মঘট, আন্দোলন প্রভৃতি উপায়, পদ্ধতির মাধ্যমে সহীন গণতন্ত্র জনসাধারণের সহযোগিতায় কার্যকর ও অব্যহত থাকে। কাজেই সমাজ সংগঠন ও পুনর্গঠনের বিষয়ে জনগণের অংশগ্রহণ, তাদের ঐক্যমত, তাদের সামাজিক দায়িত্বশীলতা তাদের সাহায্য ও সহযোগিতা প্রভৃতির উপর ভিত্তিশীল এক যুদ্ধ ও কার্যকর গণতন্ত্র হল ‘দলহীন গণতন্ত্র'।
প্রশ্ন ২। জহরলাল নেহেরু-র গণতান্ত্রিক ধারণা আলোচনা কর।
উত্তর। রাজনীতি চিন্তার ইতিহাসে নেহেরু-র বিশিষ্টতার ক্ষেত্রে গণতন্ত্র ও সমাজবাদ সম্পর্কে তার সৃজনশীল ভাবনা। নেহেরুর গণতন্ত্রের ধারণা মুখ্যত গ্রেস্ট হিসাবে রাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য পৌর অধিকার সুরক্ষিত করাও এই অধিকারের ক্ষেত্রকে সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে অবিচল তিনি। রাষ্ট্র ও ব্যক্তির মধ্যবর্তী স্তরে অবস্থিত পৌরাণিক বা মধ্যযুগীয় গোষ্ঠী, সম্প্রদায়, সংকীর্ণ জাতি, বর্ণ, ধর্ম, কোন ক্ষুদ্র জনসত্তার স্বাতন্ত্র ও ব্যক্তিগত অধিকার হস্তক্ষেপ করার সনাতন ব্যবস্থা ভারতবর্ষের আধুনিক গণতন্ত্রের প্রকল্প বিরোধী বলে নেহেরু মনে করতেন।
স্বাধীনতা, সাম্য ও আংশিকভাবে হলেও ব্যক্তিগত সম্পত্তি রক্ষার অধিকার গণতন্ত্রের অপরিহার্য অঙ্গ। রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন রাজনীতি, শাসনতন্ত্রকে এই দৃষ্টিভঙ্গিতে রূপায়িত করতে হবে এবং এভাবে সুরক্ষিত রাজনৈতিক গণতন্ত্রই অর্থনৈতিক, সামাজিক সাম্য ও ন্যায়বিচার বাস্তবায়িত করতে পারবে, সমাজ বিপ্লবের প্রয়োজন উপেক্ষা করে। গণতান্ত্রিক সমাজবাদ শব্দযুগল সোনার পাথরবাটির মত শোনালেও এর একটা মোহময়তা আছে। ইংল্যান্ডে শ্রমিক দলের প্রতিষ্ঠা ও উত্তরোত্তর প্রভাব বৃদ্ধি নেহরুর ভাবনাচিন্তাকে আচ্ছন্ন রেখেছে তার রাজনৈতিক জীবনে। রুশ বিপ্লবের অভীষ্ট অর্থনৈতিক লক্ষ্যের প্রতি নেহেরুর প্রগতি চিন্তা অনুগত হয়েছে পরবর্তীকালে। শ্রমিকদলের মতাদর্শগত নমনীয়তা ও বলশোভিকদের অর্থনৈতিক সিক্ত যুগপৎ লাভ করার রাষ্ট্রীয় প্রকরণ সন্ধানে তাই নেহেরুর অভিরুচি।
ভারতবর্ষের কৃষি অর্থনীতিতে কোন মৌলিক পরিবর্তনের কর্মসূচী গ্রহণ করেন নি নেহেরু। প্রাগ-ধনতান্ত্রিক জমিদারি প্রথার উচ্ছেদ ঘোষণা করতে তাঁর পরিচালিত স্বাধীন রাষ্ট্রের সময় লেগেছে আট বছর। আর সেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা সংবিধান, আদালত আমলাতন্ত্রের ঘোরটোপে বন্দী থেকে তার কার্যকারীতা খুইয়েছে অচিরেই। নেহেরুর গণতান্ত্রিক সমাজবাদের মতাদর্শ রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও সহযোগিতার বাধা শিল্প স্থাপনের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে বিনা বাধায়। কিছু কৃষি সম্পর্কের বিষমতা ও অনুৎপাদক ভূমি যার প্রতিকারে কোন কার্যকর পদক্ষেপের সংস্থান করেনি।
এভাবেই গণতান্ত্রিক সমাজবাদের রাষ্ট্রদর্শন Myrdal বর্ণিত নমনীয় রাষ্ট্রকে ব্যৈতা দিয়েছে। এর অন্যতম ইতিবাচক দিক হল স্বীধনতা পরবর্তী দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর ধরে সংসদীয় গণতন্ত্র ভারতবর্ষে তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পেরেছে, নানান ত্রুটি, বিচুতি। ক্ষুদ্র বৃহৎ, যাবতীয় শিল্পে বেসরকারি মালিকানার উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধির প্রতিবন্ধক না হয়েও এবং অধুনা শিল্প, বাণিজ্যকে অবাধ বাজার অর্থনীতির অঙ্গীভূত করলেও, রাষ্ট্র এমনও তার রাজনৈতিক বৈধতা খোঁজে ন্যূনতম সমাজিক ও অর্থনৈতিক দায় বহনের স্বীকৃতির মধ্যে। এটাও বাস্তব ঘটনা যে গ্রহণযোগ্যতার বিচারে ভারতবর্ষের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে গণতান্ত্রিক সমাজবাদ, বামপন্থী বৈপ্লবিক মতাদর্শের তুলনায় অগ্রবর্তী। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করলে নেহেরুর সমাজবাদী চিন্তার সবিশেষ গুরুত্ব অস্বীকার করা যাবে না।
কলমে - ড. বসুবন্ধু সেগুপ্ত
0 Comments
Thank you for contacting jibonta.in! Please let us know how we can help you.